en

বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে পর্যটন শিল্পের গুরুত্ব ও সম্ভাবনা

অপরুপ সুন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের এই বাংলাদেশ। প্রতি বছর হাজার হাজার দেশি এবং বিদেশি পর্যটক বাংলাদেশ ভ্রমন করেন। নানা ঐতিহাসিক এবং প্রাকৃতিক সুন্দর্যে ভরপুর আমাদের এই দেশ। আমাদের আছে শীতল পানির ঝর্না, দুর্দম পাহাড় এবং কক্সবাজারের মত সমুদ্র সৈকত যা বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করে। বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়ন তথা অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের প্রভুত উন্নয়নের ক্ষেত্রে পর্যটন খাত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে। বাংলাদেশ সরকার পর্যটন খাতের উন্নয়ন এবং সমগ্র বিশ্বের সামনে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পকে তুলে ধরার জন্য নানা কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে বাংলাদেশের পর্যটন খাতের উন্নয়নের বিকল্প নেই।

অর্থনৈতিক উন্নয়ন

পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে এই খাত থেকে। পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে।

বিদেশী পর্যটক দের থাকা খাওয়া এবং পরিবহনের জন্য অনেক বৈদেশিক বিনিয়োগ হয়েছে যা দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের অবদান রাখছে। পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের জন্য দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। দেশের অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রার আগমনের জন্য পর্যটন খাতের থেকে ভাল কোন মাধ্যম হতে পারে না।

সাংস্কৃতিক উন্নয়ন

বাংলাদেশে ভ্রমন করার জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন জাতি এবং ভিন্ন সংস্কৃতির লোকজন আসছে। বাংলাদেশ ভ্রমন করতে যেয়ে তাদের বাংলাদেশের ভাষা, সভ্যতা এবং সংস্কৃতির সঙ্গে একটা গভীর সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে।

এভাবে সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতির বিস্তার ঘটছে। তাছাড়া বিদেশী পর্যটকদের সাথে কথা বলা এবং তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য বাংলাদেশের মানুষও বিভিন্ন ভাষা শিখছে। এভাবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তৈরিতে পর্যটন খাত বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।

তাছাড়া পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে আমরা সারা বিশ্বের কাছে আমাদের ভাষা, আমাদের আচার-অনুষ্ঠান, সংস্কৃতি এবং বাঙ্গালীর আতিথেয়তা সম্পর্কে জানান দিতে পারি যা বহির্বিশ্বে আমাদের ভাব-মর্যাদা উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

পরিবেশগত উন্নয়ন

বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে প্রাকৃতিক সম্পদ তথা প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং বন্য জীবজন্তুর ক্ষতি হচ্ছিল। এর জন্য এক ধরনের স্বার্থান্বেষী মানুষ দায়ী।

এই সকল ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার খুব বেশি সতর্ক ছিল না কিন্তু পর্যটন শিল্পের ক্রমাগত উন্নয়ন এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার কথা চিন্তা করে সরকার এই সকল প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।

প্রাকৃতিক পরিবেশের সুন্দর্য্য বৃদ্ধিতেও পর্যটন খাত অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। তাছাড়া ভ্রমণের ক্ষেত্রে দর্শনার্থীদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়ার লক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে পর্যটন খাতের উন্নয়নের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশেরও উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়েছে।

প্রযুক্তিগত উন্নয়ন

প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের যেই অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে তার পেছনে পর্যটন খাতের অনেকটা অবদান রয়েছে। বাংলাদেশে ভ্রমনের উদ্দেশ্যে আসা উন্নত বিশ্বের নাগরিকদের কাছ থেকে দেখে আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে একটা আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশে আধুনিক প্রযুক্তির উন্নয়ন হয়েছে।

তাছাড়া বাংলাদেশ থেকেও বিভিন্ন দেশে অনেক লোক ভ্রমন করতে যায় যাদের হাত ধরে বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে। মোটকথা ভ্রমনের মাধ্যমেই কোন এক দেশের প্রযুক্তি, সভ্যতা এবং সংস্কৃতি অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়।

রাজনৈতিক সুবিধা

ভ্রমনের হাত ধরে দুটি দেশের মানুষের মধ্যে সাংস্কৃতিক আদান প্রদান হয় এবং এক সময় পরস্পরের মধ্যে একটা ইতিবাচক সম্পর্ক তৈরি হয় যা রাজনৈতিক সুসম্পর্ক তৈরিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কেননা বর্তমান গণতান্ত্রিক বিশ্বে জনগনের মতামত রাজনীতিতে বিশেষ ভাবে প্রভাব বিস্তার করে। সরকারের মতামত বলতে জনগনের ঐক্যবদ্ধ মতামতকেই বোঝায়।

সুতরাং, দুই দেশের জনগনের মধ্যে যখন একটা ভাল বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয় তখন সরকারের কিছু করার থাকে না আর জনগনের মধ্যে সম্পর্ক ভাল না হলে রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক বেশি দুর এগিয়ে নেয়া যায় না। তাই কোন দেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করতে পর্যটন শিল্প নীরব ভূমিকা পালন করে।

নতুন নতুন শিল্পের উদ্ভাবন

পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের জন্য দেশের ব্যাংকিং, বীমা, পরিবহন শিল্পের উন্নয়নের পাশাপাশি অনেক নতুন নতুন শিল্পের আবির্ভাব হচ্ছে যা দেশের উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত জরুরী। পর্যটকদের ভ্রমনের সুবিধার্থে দেশে অনেক টুরিস্ট প্রতিষ্ঠান চালু হয়েছে।

তাছাড়া, পর্যটকদের আপ্যায়নের জন্য বিলাসবহুল হোটেল মোটেল তৈরি করা হয়েছে। হোটেল ব্যবসা বর্তমানে একটি লাভজনক খাতে পরিণত হয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশের স্থানীয় কুটির শিল্পেরও ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।

সবশেষে বলা যায় বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অন্যান্য খাতের মত পর্যটন শিল্পও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। আমাদের প্রত্যেকের উচিত নিজ নিজ জায়গা থেকে পর্যটন শিল্প তথা দেশের সার্বিক উন্নয়নে অবদান রাখা।

আরও পড়ুন:-

কপিরাইট © ২০১৮ রংতুলি চয়েস ইনফো