en

আর কত অপচয় করলে অপচয় রোধ করা যাবে

অপচয় আমাদের নিত্যদিনের পরিচিত কাজ। আমরা সবাই প্রতিদিন স্বেচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় অপচয় করে থাকি। অপচয় শুধুমাত্র আমাদের ব্যক্তিজিবনেই সীমাবদ্ধ নয়। জাতীয় পর্যায়েও অপচয় হয়ে থাকে। অপচয়ের কারনে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকার সময়, খাবার, টাকা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস নষ্ট হয় অথচ আমাদেরই আশ-পাশের লোকজন না খেয়ে থাকে। ইসলাম এবং অন্যান্য ধর্মও অপচয় না করার জন্য জোরদার করছেন। ইসলামে অপচয়কারিকে শয়তানের ভাই বলে আখ্যায়িত করেছে। এমনকি অজু করার সময় পানির অপচয় না করার কথা বলা হয়েছে সেটা যদি হয় প্রবাহমান কোন নদী তবও।

খাবার

মানুষের মৌলিক চাহিদার মধ্যে খাবারের স্থান প্রথম। আমাদের বেঁচে থাকা এবং দেহ গঠন, ক্ষয়পূরণ ও বৃদ্ধিসাধনের জন্য খাবারের প্রয়োজন। অথচ এই খাবার আমরা বুঝে না বুঝে অপচয় করে যাচ্ছি।

যেমন কোন অনুষ্টানে গেলে দেখা যায় কেউ কেউ ইচ্ছা করে অনেক খাবার নিয়ে নষ্ট করছে। কেউ কেউ ইচ্ছা করে অন্য জনকে অনেক খাবার সাজিয়ে দিচ্ছে। অথচ আমাদের চারপাশের অনেক মানুষ ঘরের কোণে গুমরে মরছে।

রাস্তার পাশে ডাস্টবিনের পচা খাবার থেকে কুড়িয়ে খাবার খাচ্ছে। অনেক পরিবার আছে যেখানে জন্মের পর ছোট বাচ্চাকে শীতের সময় পান্তা ভাত খাচ্ছে। আবার অনেক পরিবার আছে যেখানে প্রতিনিয়ত অকারণে প্রচুর খাবার নষ্ট করা হচ্ছে।

এই ধরনের অপচয় আমাদের মানবিক মূল্যবোধ ধ্বংস করে দিচ্ছে। প্রতিটা খাবার যা আমরা নষ্ট করি তার জন্য আমাদের অবশ্যই জীবনের কোন একটা বাকে হিসেব দিতে হবে না হয় মৃত্যুর পর।

সময়

আমাদের জীবনে সময়ের গুরুত্ব অপরিসীম। কথায় বলে "সময়ের একে ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়"। কিন্তু আমরা বুঝে না বুঝে সময়ের অপচয় করে থাকি।

যেমন আমরা কয়েকজন বসে আজেবাজে কথা বলে, সমালোচনা করে, একজন আরেক জনের সম্পর্কে মন্তব্য করে কয়েকঘন্টা পার করে দিই। বেশিরভাগ মহিলারা ঘরে বসে টিভিতে সিরিয়াল দেখে অনেক সময় পার করে দেয়।

অথচ তারা যদি ঘরে বসে অবসর সময়টা হাতের কাজকরে, ইবাদত করে, সন্তানদের পড়াশুনার ব্যাপারে মনোযোগী হয় তাহলে দেশ ও জাতির অনেক উপকার হয়।

পুরুষরা চায়ের দোকানে বসে সমালোচনা বা বন্ধুদের সাথে আড্ডা মেরে সময় নষ্ট না করে যদি আত্ন- কর্মসংস্থান, সামাজিক উন্নয়ন বা পারিবারিক উন্নয়নের কথা চিন্তা করে তাহলে দেশে বেকারের সংখ্যা কমে যাবে,অপরাধ প্রবণতা কমে যাবে,পারিবারিক অশান্তি কম হবে।

এছাড়া আমরা যদি বিভিন্ন অফিসগুলোর দিকে তাকাই তাহলে দেখব তারা আজকের কাজ একমাস পরে করছে। এতে করে কাজগুলো জমে যায় এবং এগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না।

এতে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু আমরা যদি সময়ের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করি তাহলে দেশ ও জাতির জন্য সুন্দর আগামী উপহার দিতে পারব।

অর্থ

আমাদের জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রেই অর্থের প্রয়োজন অপরিসীম। আমরা নানা কাজে অর্থ ব্যয় করি। কখনো কখনো অতি উৎসাহী হয়ে টাকা খরচ করি যা কাম্য নয়। আমাদের কাছে টাকা থাকলেই মনে করি সব কিছই বুঝি আমাদের ভোগের জন্য।

কিন্তু একবারও চিন্তা করিনা যে এই টাকার উপর অসহায় দোস্ত দরিদ্রের অধিকার আছে। আমরা ভুলে যায় ভোগে নয় ত্যাগেই প্রকৃত সুখ নিহিত। এবার বলতে পারেন আমার টাকা আমি ভোগ করব তাতে অপচয়ের কি আছে।

তবে আপনাকে মনে রাখতে হবে প্রয়োজনের চেয়ে অত্তাধিক খরচ করাই অপচয়। অর্থের অপচয় ব্যক্তি, সমাজ তথা ঘোটা জাতির জন্য বিপদজনক। আপনি একজন ব্যক্তির অপচয় এবং বিলাস বহুল জীবন অন্য আরও দশ জনকে উৎসাহিত করবে যা এক সময় জাতীয় সমস্যায় পরিনত হতে পারে।

তাছাড়া অপচয় আপনার চাহিদার সীমা সামর্থ্যের চেয়ে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিবে যা জীবন থেকে সুখ কেড়ে নেয়। কেননা সন্তুষ্টির মাঝেই সুখ নিহিত।

জাতীয় সম্পদ

আমারা প্রতিদিন অনেক জাতীয় সম্পদ ব্যক্তিগত ভেবে ব্যবহার করছি নিজের অজান্তে। বিশেষ করে শহরে জীবনে এই সব উপাদানের ব্যবহার খুব বেশি। যেমন গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ ইত্যাদি।

দিনের কোন এক সময়ে কয়েক ঘন্টার জন্য এই সব উপাদান না থাকলে জীবনে দুঃসহ ভোগান্তির উদ্ভব হয়। কিন্তু এই সব উপাদান যখন পরিমাণমত থাকে তখন আমরা অপচয় করতে দ্বিধাবোধ করিনা। একটা ম্যাচের কাঠির জন্য সারাদিন গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে রাখি।

অপ্রয়োজনে ঘরের পাখা বাতি জ্বালিয়ে রাখি যা একদমই নির্বুদ্ধিতার পরিচায়ক। তাছাড়া ওয়াসার পানিত আছেই। আমাদের এই সকল কাজের ফলে শিল্প ক্ষেত্রের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।

শিল্প খাতে পর্যাপ্ত পরিমান গ্যাস সরবরাহ করতে পারছে না ফলে জাতীয় উৎপাদন তথা সমগ্র অর্থনীতি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। বিদ্যুৎ এবং জ্বালানির চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে যা দেশের উন্নয়নের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাই এখনই সময় আমাদের এই সব বিষয়ে সিচেতন হওয়া এবং দেশ, জাতি তথা নিজের সমৃদ্ধির পথে সাহায্য করার।

আর কত?

আমরা উপরের লিখা থেকে দেখতে পারি যে খাবার, সময়, অর্থ এবং জাতীয় সম্পদ কত ভাবে অপচয় করছি। আমরা অধিকাংশ মানুষই না জেনে বা অনিচ্ছা বশত এই সকল অপচয় করে থাকি যা প্রকৃতপক্ষে নিজের জন্যই অকল্যাণ বয়ে আনে।

এবার আমাদের অবশ্যই অপচয় বন্ধ করতে হবে, অনেক হয়েছে, আর কত! আপনি চিন্তা করতে পারেন, আমি একা অপচয় না করলেই কি সব ঠিক হয়ে যাবে? আমি বলব হা। কারন একজন আমি নিয়েই কিন্তু আমরা তথা ঘোটা দেশ এবং জাতি।

আমাদের ইচ্ছা, আমাদের চেষ্টাই জাতির অগ্রগতির পথে সহায়ক শক্তি। আসুন আমাদের নিজের প্রতি, দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই অপচয় রোধ করি এবং অন্যকে অপচয় রোধ করতে উৎসাহিত করি। বাচবে আমাদের সময়, অর্থ, খাবার এবং জাতীয় সম্পদ। দেশ হবে উন্নত ও স্বনির্ভর।

কপিরাইট © ২০১৮ রংতুলি চয়েস ইনফো