en

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পারিবারিক পশু-পাখি পালনের গুরুত্ব

বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে অধিকাংশ বাড়িতেই পশু-পাখি পালন করে থাকে। পারিবারিকভাবে পশু পাখি পালনে অনেক লাভ আছে। বাড়ির খালি জায়গায় কিংবা খোলা পদ্ধতিতে পশু পাখি পালনে খুব বেশি খরচ হয় না কিন্তু পশু পাখি থেকে মানুষ বিভিন্নভাবে উপকৃত হচ্ছে। পরিবারের সুস্বাস্থ্যের পাশাপাশি দেশ এবং জাতীয় অর্থনীতিতেও পারিবারিক পশু-পাখি পালন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। পারিবারিক পশু-পাখি পালন তথা জাতীয় অর্থনীতিতে এর অবধান বৃদ্ধির লক্ষে বাংলাদেশ সরকার একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তাছাড়া পারিবারিকভাবে পশু-পাখি পালনের জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধির কাজ অব্যাহত রেখেছে। এই খাতে সফল হলে পারিবারিক খামার থেকে দেশের মানুষের আমিষ এবং দুধের চাহিদা পূরণ করে রপ্তানি করেও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে বলে আশাবাদী।

সহকারী কাজঃ বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ পরিবারই কৃষি নির্ভর। কৃষি বলতে বোঝাতে চেয়েছি ফসল উৎপাদন। ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি একটা পারিবারিক খামার বদলে দিতে পারে একটি পরিবারের অবস্থা। বর্তমানে ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে অধিক খরচ এবং শ্রম লাগে।

তার উপর ফসলের ন্যায্য দাম না পাওয়ার কারনে অনেক কৃষকই আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। প্রচলিত কৃষিকাজের পাশাপাশি যদি পশুপাখি পালনের একটি পারিবারিক খামার স্থাপন করা যায় তাহলে সহকারী কাজ হিসেবে পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা আনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

অবসর সময় কাজে লাগেঃ আমাদের দেশে ফসল উৎপাদনের জন্য সারা বছর কাজ করতে হয় না। বিশেষ করে বর্ষাকালে গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ কৃষি পরিবারই অবসর জীবন যাপন করে।

তাছাড়া, ফসলের বীজ বপন থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা কাজই দীর্ঘ মেয়াদী। যার ফলে ফসল ফলানোর জন্য সারাদিন কাজ করতে হয় না। দিনের অনেকটা সময় অবসর কাটায়। এই অবসর সময়টাকে কাজে লাগিয়ে একটি পারিবারিক খামার করতে পারলে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

পরিবারের সুস্বাস্থ্য রক্ষাঃ পারিবারিক খামার থাকলে পরিবারের সুস্বাস্থ্য রক্ষার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে নিঃসন্দেহে। কারন বাংলাদেশের গ্রামের অধিকাংশ পরিবারই আর্থিকভাবে অসচ্ছল যার কারনে সঠিক পরিমানে খাদ্য উপাদান গ্রহণ করা সম্ভব হয় না।

বিশেষ করে বাংলাদেশের অধিকাংশ পরিবারের সদস্যদেরই আমিষের ঘাটতি রয়েছে। যার ফলে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী সহ নানা অসুবিধা নিয়ে শিশু জন্মগ্রহণ করছে। তাছাড়া পর্যাপ্ত পরিমানে খাবার গ্রহণ করতে না পারা শিশুদের পরিপূর্ণ শারীরিক এবং মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে একটা বড় রকমের বাধার সৃষ্টি করছে। যদি পরিবারে একটি খামার থাকে তাহলে এই ধরণের সমস্যা খুব সহজেই সমাধান করা সম্ভব।

নারী শক্তির যথাযথ ব্যবহারঃ বাংলাদেশের অর্ধেক জনশক্তিই হচ্ছে নারী কিন্তু কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ যথার্থ নয়। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের নারীরা এক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে। এর কারন হিসেবে বলা যেতে পারে, বাংলাদেশের কর্মক্ষেত্র নারীবান্ধব নয়, গ্রামাঞ্চলে নারী কর্মসংস্থানের অভাব এবং বাইরে গিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে সামাজিক নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি।

এই সকল সমস্যার সমাধান করে নারী শক্তির যথার্থ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে পারিবারিক খামারের বিকল্প আর কি হতে পারে। প্রথমত মহিলাদেরকে বাড়ির বাইরে যেয়ে কাজ করতে হচ্ছে না। তাছাড়া বাড়িতে অন্যান্য কাজের পাশাপাশি খামারে সময় দিতে পারে।

তাছাড়া বাংলাদেশের নারীরা এই সকল কাজে বেশ পারদর্শীও বটে। সুতরাং, পারিবারিক খামার স্থাপন হলে বাংলাদেশের নারী শক্তির সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিত করার সম্ভব হবে। তাছাড়া, এর দ্বারা নারীরা স্বাবলম্বীও হতে পারে খুব সহজে।

অধিক মুনাফা অর্জনঃ পারিবারিক খামারের ক্ষেত্রে মুনাফার পরিমাণ বেশি থাকে। কারন, বাণিজ্যিক খামার স্থাপন করতে হলে প্রথম থেকে সব কিছু শুরু করতে হয়। বাণিজ্যিক খামার দেখাশুনার জন্য আলাদা লোক প্রয়োজন হয় যার ফলে খামারের ব্যয় বেড়ে যায়।

তাছাড়া পারিবারিক খামারে খুব বেশি মুনাফার প্রয়োজন হয় না। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে অধিকাংশ কৃষি পরিবারেই পশু পাখির খাবারের মত যথেষ্ট খাবার থাকে। যার ফলে পশুপাখির খাবারের খরচ কম লাগে।

পারিবারিক খামার খুব বেশি বড় আকারের হয় না ফলে জায়গা কম লাগে। নিজেদের পরিত্যক্ত জমিতেই পশুপাখির থাকার ঘর নির্মাণ করা যায়। সব মিলিয়ে পারিবারিক পশু পাখি পালনের ক্ষেত্রে খরচ কম হয় এবং ব্যয় কম হয়। পারিবারিক খামারের পরিধি বৃদ্ধি করে বড় ধরণের ফার্ম করার সম্ভাবনাতো থাকছেই।

জাতীয় অর্থনীতিতে অবদানঃ বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতির চাকা ঘুড়িয়ে দেয়ার জন্য পারিবারিক খামার একটা বড় ধরণের ভূমিকা পালন করতে পারে। বাংলাদেশের শিক্ষিত বেকার যুব সমাজ যদি এই খাতের দিকে অগ্রসর হয় তাহলে দেশের বেকারত্বের হার কমে আসবে।

তাছাড়া, সামাজিক অস্থিরতা এবং নানা রকম অপকর্ম দূরীকরণের ক্ষেত্রেও পারিবারিক খামার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। জাতীয় স্বাস্থ্য সূচক উন্নয়ন এবং দেশের মানুষের আমিষের চাহিদা পুরনে পারিবারিক খামার অবদান রাখতে পারে। তাছাড়া দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করতে পারলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রেও পারিবারিক খামার ভূমিকা পালন করতে পারে।

আরও পড়ুন:-

কপিরাইট © ২০১৮ রংতুলি চয়েস ইনফো