en

মাইগ্রেন কি? মাইগ্রেনের উপসর্গ, কারণ এবং ব্যথা মুক্তির উপায়

মাইগ্রেন অতি পরিচিত একটি রোগ৷ "মাইগ্রেন" শব্দের উৎপত্তি হয়েছে গ্রীক শব্দ ἡμικρανία (হেমিক্রানিয়া) থেকে, যার অর্থ "মাথার একদিকে ব্যথা"। ἡμι- (হেমি-), "অর্ধেক", এবং κρανίον (ক্রানিয়ন), "খুলি" থেকেই এর সৃষ্টি। মাথা- ব্যথা বললে সবার আগে মাইগ্রেন ও সাইনোসাইটিসের নাম মনে পড়ে সবার৷ বয়ঃসন্ধির পর থেকে মাঝবয়স পর্যন্ত যে কেউ মাইগ্রেনে আক্রান্ত হতে পারেন৷ পুরুষ-স্ত্রীতে কোনও ভেদাভেদ নেই, তবে মহিলাদের ক্ষেত্রে মাইগ্রেনের প্রকোপ তুলনামূলক বেশি৷ সাধারণত ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সে এই রোগ শুরু হয়। বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ১১ শতাংশ বয়স্ক মানুষ মাইগ্রেনজনিত মাথাব্যথায় ভোগেন।

মাইগ্রেনের উপসর্গ

মাইগ্রেনের ব্যথা সাধারণত মাথার একপাশে হয়, তবে একসঙ্গে দু পাশেও হতে পারে৷ ক্ষেত্র বিশেষে পুরো মাথা জুড়ে কিংবা কপালের এক অংশ বা একটি অক্ষিপটের গভীরে অনুভূত হতে পারে৷ ব্যথাটি পর্যায়ক্রমিক (Episodic), অর্থাৎ কয়েক দিন বা কয়েক মাসের ব্যবধানে হতে পারে, এবং সাধারণত কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী হয়৷ কেউ কেউ ব্যথা শুরু হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে কিছু উপসর্গের অভিজ্ঞতা (Premonitory symptoms) পেতে পারেন: যেমন- আচমকা চোখের সামনে রঙিন ঝলক, দৃষ্টি বিভ্রান্তি, কথা বলতে অসুবিধে কিংবা শরীরের একপাশে সাময়িক অবশ বা অনুভূতি শূন্য বোধ করা৷
বেশিরভাগ রোগী মাথার গভীরে এক ধরনের দপদপে ব্যথার অস্তিত্ব অনুভব করেন৷ কপালের মাঝখান থেকে আড়াআড়ি কানের পেছন পর্যন্ত ব্যথাটা ছড়িয়ে পড়তে পারে৷ কিছু কিছু ক্ষেত্রে কপালে না হয়ে শুধু কানের ঠিক ওপরের অংশে ব্যথা হতে পারে৷ব্যথার সঙ্গে বমি বমি ভাব এবং দৃষ্টি বিভ্রান্তি দেখা দেয়৷ প্রকোপের সময় সাধারণত রোগীকে ফ্যাকাসে দেখায়, ব্যথা চরম হলে বমি হতে পারে এবং রোগী ক্লান্তি অনুভব করেন৷ উজ্জ্বল আলো সহ্য করতে পারেন না বলে কেউ কেউ অন্ধকার ঘরেও শুয়ে থাকতে বাধ্য হন৷

মাইগ্রেনের কারণ

মাইগ্রেনের মাথা-ব্যথার কারণ পুরোপুরি জানা যায়নি৷ তবে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহে সাময়িক ঘাটতির জন্যে মাইগ্রেনের ব্যথা হয়৷ মাইগ্রেনে আক্রান্ত রোগীদের আত্মীয়দের মধ্যেও একই রোগ লক্ষ্য করা যায় বলে এটা নিশ্চিত যে রোগটির বিকাশের ক্ষেত্রে জেনেটিক (বংশগত) প্রবণতা রয়েছে, অর্থাৎ আপনার বাবা-মার থাকলে আপনারও হতে পারে৷
ধারণা করা হয়, মাইগ্রেন একধরনের নিউরোভাস্কুলার ডিজঅর্ডার। কারণ এই সমস্যা মস্তিষ্কে সৃষ্টি হয় এবং তারপর ধীরে ধীরে রক্তশিরায় ছড়িয়ে যায়। কিছু গবেষক ধারণা করেন, নিউরোনাল বিষয়গুলো অধিকতর প্রভাব ফেলে। অন্যদিকে কয়েকজন মনে করেন রক্তশিরাই মূল প্রভাব ফেলে।
খাদ্যাভাসের বৈচিত্র্যের কারণে মাইগ্রেনের প্রকোপ বেড়ে যেতে পারে: যেমন চকোলেট, পনির বা মদ্যপান (অ্যালকোহল) মাইগ্রেনের প্রকোপ বাড়িয়ে দেয়৷ মহিলাদের ক্ষেত্রে জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়িও একই ভূমিকা রাখতে পারে৷ এছাড়া অতিরিক্ত কাজের চাপ, বিষণ্ণতা এবং উদ্বেগের সঙ্গেও মাইগ্রেনের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে৷
নারীদের ঋতুস্রাবের সময় মাথাব্যথা বাড়ে। কোষ্ঠকাঠিন্য, অতি উজ্জ্বল আলো এই রোগকে বাড়িয়ে দেয়। মাথাব্যথা শুরু হলে তা কয়েক ঘণ্টা, এমনকি কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

মাইগ্রেনের চিকিৎসা ও উপদেশ

মাইগ্রেনের ব্যথা সাধারণত অ্যাসপিরিন বা প্যারাসিটামল ট্যাবলেট সেবনে নিরাময় হয়৷ মাইগ্রেনের প্রকোপ কমাতে বা ব্যথা উপশমের জন্যে নিম্নোক্ত অভ্যাসগুলো গড়ে তুলতে পারেন:
• খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনতে পারেন৷ চকোলেট, পনির,মদ্যপান(অ্যালকোহল) এড়িয়ে চলা ভালো৷ জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি যারা সেবন করেন, মাইগ্রেনের ব্যথার প্রকোপ বেড়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বড়ি সেবন বন্ধ করে দিতে হবে৷ প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে৷
• হাসি-খুশি থাকার চেষ্টা করতে হবে, জীবনের আনন্দকে উপভোগ করতে হবে৷
• অতিরিক্ত টেনশন করা যাবেনা। রাত জাগা যাবেনে৷
যেসব খাবার মাইগ্রেনের সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে
* ম্যাগনেশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার। যেমন ঢেঁকি ছাঁটা চালের ভাত, আলু ও বার্লি মাইগ্রেন প্রতিরোধক।
* বিভিন্ন ফল, বিশেষ করে খেজুর ও ডুমুর ব্যথা উপশম করে।
* সবুজ, হলুদ ও কমলা রঙের শাকসবজি নিয়মিত খেলে উপকার হয়।
* ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি মাইগ্রেন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তিল, আটা ও বিট ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম রয়েছে।
* আদার টুকরো বা রস দিনে দুবার জিঞ্চার পাউডার পানিতে মিশিয়ে খেতে পারেন।

কী ধরনের খাবার এড়িয়ে চলবেন

* চা, কফি ও কোমলপানীয়, চকলেট, আইসক্রিম, দই, দুধ, মাখন, টমেটো ও টক জাতীয় ফল খাবেন না
* গম জাতীয় খাবার, যেমন রুটি, পাস্তা, ব্রেড ইত্যাদি
* আপেল, কলা ও চিনাবাদাম
* পেঁয়াজ
তবে ব্যক্তিভেদে ভিন্ন ভিন্ন খাবারে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সবচেয়ে ভালো হয় একটা ডায়েরি রাখা। যাতে আপনি নোট করে রাখতে পারেন কোন কোন খাবার ও কোন কোন পারিপার্শ্বিক ঘটনায় ব্যথা বাড়ছে বা কমছে। এ রকম এক সপ্তাহ নোট করলে আপনি নিজেই নিজের সমাধান পেয়ে যাবেন। তবে ব্যথা বেশি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

মাইগ্রেন থেকে রেহাই পাওয়ার কিছু উপায়

* মাইগ্রেন চিকিৎসায় তাৎক্ষণিক এবং প্রতিরোধক ওষুধের পাশাপাশি কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়।
* প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে হবে এবং সেটা হতে হবে পরিমিত।
* অতিরিক্ত বা কম আলোতে কাজ না করা।
* কড়া রোদ বা তীব্র ঠান্ডা পরিহার করতে হবে।
* উচ্চশব্দ ও কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে বেশিক্ষণ না থাকা।
* বেশি সময় ধরে কম্পিউটারের মনিটর ও টিভির সামনে না থাকা।
* মাইগ্রেন শুরু হয়ে গেলে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা (বিশেষ করে বমি হয়ে থাকলে), বিশ্রাম করা, ঠান্ডা কাপড় মাথায় জড়িয়ে রাখা উচিত।

আরও পড়ুন:-

কপিরাইট © ২০১৮ রংতুলি চয়েস ইনফো