en

আলোর উপর আলোকপাত

আলো না থাকলে পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্বই থাকত না। উদ্ভিদ আলোর মাধ্যমেই সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরি করে। আর আমরা সেই খাদ্য খেয়েই বেঁচে থাকি। আলো না থাকলে উদ্ভিদ খাদ্য কিভাবে তৈরি করত এবং আমরা কি খেয়ে বাঁচতাম? তাই আমাদের পৃথিবীতে বেঁচে থাকা ও প্রাণের অস্তিত্ব, দুটোই সম্ভব হয়েছে এই আলোর জন্যই। আমাদের কাছে আলো সাধারণ কিছু হলেও কিন্তু বিজ্ঞানীগণের কছে তা নয়। তাঁরা তাঁদের বৈজ্ঞানিক দৃষ্টি দিয়ে দেখেছেন আলোকে ও জানার চেষ্টা করেছেন এই আলো সম্পর্কে।

আর এই আলোর দ্বৈত চরিত্র নিয়ে অনেক বিজ্ঞানী থেকেছেন দ্বিধা দ্বন্দ্বে। বিজ্ঞানী টলেমী ও গণিতবিদ ইউক্লিড মনে করতেন, মানুষের চোখ থেকে বস্তুতে গিয়ে আলো পড়ে এবং আমরা সেই বস্তু দেখতে পাই। সেই সময় তাঁদের প্রভাবশালীত্বের কারণে অন্যরাও এই কথা বিশ্বাস করত।

তবে তাঁদের এই কথা মানলেন না বিজ্ঞানী আল হাজেন। মিশরে নীল নদে বাঁধ নির্মাণের জন্য টাকা নিয়ে আল হাজেন শুরু করেন আলো নিয়ে গবেষণা। তিনি বললেন, মানুষের চোখ থেকে আলো বের হয়না, কোনো উৎস থেকে আলো বের হয়ে বস্তুতে পড়ার পর প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে পড়লে আমরা সেই বস্তু দেখতে পাই।

এছাড়াও তিনি বলেন, আলো ঘন মাধ্যম থেকে হালকা মাধ্যমে গেলে আলোর গতি কমে যায়। এরপর, স্যার আইজ্যাক নিউটন ১৬৬৫ সালে বিখ্যাত প্রিজম পরীক্ষাটি করেন। তিনি একটি অন্ধকার ঘরে ছোট একটি ছিদ্র দিয়ে আসা আলো ফেললেন প্রিজমের উপর। প্রিজমের ভিতরে দিয়ে যাওয়ার সময় আমাদের চোখে দৃশ্যমান সাদা আলো আর সাদা থাকল না, ভাগ হয়ে গেল সাতটি রঙে! আলো ভাগ হলো সেই সাতটি রঙে যে সাতটি রঙ আমরা রংধনুতে দেখতে পাই।

নিউটন মনে করতেন আলো আসলে কণা। আসলে আলোকে কণা ধরলে কিছু সুবিধা হয়। তাঁর সময় মানুষ আলো সম্পর্কে যা জানত তা আলোর কণাতত্ত্ব দিয়ে ব্যাখ্যা করা যেত। যেমন-আলোর প্রতিফলন ও প্রতিসরণ। কিন্তু নিউটনের এই কণাতত্ত্ব অনেক বিজ্ঞানী মেনে নিলেন না।

বিজ্ঞানী হাইগেনস বললেন আলো কণা নয় আলো হলো তরঙ্গ। কিন্তু বিজ্ঞান সমাজে নিউটনের ব্যাপক প্রভাবের কারণের চাপা পড়লো হাইগেনসের তরঙ্গ তত্ত্ব। প্রায় দেড়শ বছর পর দ্বি-চির বা ডাবল স্লিট পরীক্ষার মাধ্যমে আলোর তরঙ্গ তত্ত্বের প্রমাণ দিলেন বিজ্ঞানী থমাস ইয়াং।

কয়েকবছর পর বিজ্ঞানী ম্যাক্স প্লাঙ্ক আবিষ্কার করেন কোয়ান্টাম তত্ত্ব। এরপর আইনস্টাইন ফিরিয়ে আনলেন আলোর কণা তত্ত্বকে। তিনি এই কণার নাম দিলেন কোয়ান্টা। কিন্তু নিউটনের কণা তত্ত্বের সাথে এই নতুন কণা তত্ত্বের মিল সামান্যই।

এরপর আইনস্টাইন বললেন আলো একই সাথে কণা ও তরঙ্গ! আলো হলো তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ। তরঙ্গ হওয়ার কারণে আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্যও আছে। এই আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বেশি হলে বা কম হলে আমরা সেই আলো দেখতে পাই না। আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ৪০০-৭০০ ন্যানোমিটার হলেই আমরা সেই আলো দেখতে পাই যাকে আমরা বলি দৃশ্যমান আলো।

তরঙ্গ দৈর্ঘ্য কম হলে আমরা তাকে বলি- গামা রশ্মি, রঞ্জনরশ্মি, অতিবেগুনি রশ্মি। আবার বেশি তরঙ্গ দৈর্ঘ্য হলে আমরা তাকে বলি - ইনফ্রারেড রশ্মি,মাইক্রোওয়েভ,রেডিও ওয়েভ যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত টিভির রিমোট, ওভেন,মোবাইল ফোন ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয়।

এগুলো আমরা দেখতে পাই না বলে জানিও না যে এগুলো আসলে এক প্রকার আলো! আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বদলালেই বদলে যায় আলোর রঙ। আমাদের চোখে দৃশ্যমান আলোর মধ্যে লাল রঙের আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি এবং নীল আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম।

কপিরাইট © ২০১৮ রংতুলি চয়েস ইনফো